Study LightsStudy Lights

Blog Details

  • Home
  • Blog
  • Blog
  • আহা শৈশব! কি মধুর স্মৃতি….

আহা শৈশব! কি মধুর স্মৃতি….

কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গিয়েছি…..

এইতো কয়েকদিন আগেই হাফপ্যান্ট পড়া দশ বছরের এক বালক তার স্কুল মাঠের কড়ই গাছের নিচে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকতো;

পায়ের কাছে আছড়ে পড়ত দলবেঁধে অনেক দূর পাড়ি দেওয়া ঢেউ; মাঝে মাঝে সে ঢেউ গোনার চেস্টা করতো ; কিন্তু খেই হারিয়ে ফেলতো একটু পরেই; আবার উদাস হয়ে তাকত নদীর দিকে ; কখনো-বা আকাশের দিকে; দুপুরে বৃষ্টিভেজা রোদে মাঝে মাঝে একটা সোনালি ডানার চিল উড়ে বেড়াত; করুণ সুরে ডেকে উঠতো হঠাৎ হঠাৎ; বালক আরো বেশি উদাস হয়ে যেত;

 

 

কখনো কখনো  বালক স্কুল থেকে ঘরে ফেরার সময় অবাক হয়ে দেখতো, আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসছে; বালকের ছাতা ছিল না; কাজেই সে ঝুম বৃষ্টির কবল থেকে বইখাতা বাঁচাতে এক হাতে স্যান্ডেল আর এক হাতে বই নিয়ে ভোঁ দৌড় দিত; মাঝে মাঝে রাস্তার কাদায় পা পিছলে পড়ে যেত; কাদামাখা ভূত হয়ে ফিরতো বাসায় ; বালকের মা ব্যর্থ চেস্টা করতো আঁচল দিয়ে মাথার মুছে দেয়ার; মায়ের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে বালক দৌড়ে লাফিয়ে পড়তো পুকুরে; পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা অদ্ভূত শব্দ করতো; বালক অবাক হয়ে শুনত সে শব্দ; দীর্ঘ সময় পুকুরে দাপাদাপি করার পর চোখ লাল করে সে ফিরত; মা আঁচল দিয়ে মাথা মুছে দিত; শান্ত ছেলের মতো পুঁটি মাছের ভাজি দিয়ে গোগ্রাসে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত গিলে,গল্পের বই নিয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তো বালক;

 

 

টিনের চালে তখন একটানা বৃষ্টি পড়তো ;

বাইরে সজনে গাছটা উড়ে যেতে চাইতো হাওয়ার সাথে ; কলাগাছের পাতায় চলতো বাতাসের দাপদাপি ; বালক গল্পের বইয়ে ডুবে যেত; দুষ্টু বাবার কবল থেকে নৌকা নিয়ে পালাচ্ছে হাকল বেরি ফিন….

সে কি নিরাপদে পালাতে পারবে?  না ওর বাবা ওকে ধরে ফেলবে?  টান টান উত্তেজনা! একসময় ঘুমিয়ে পড়তো বালক ; ঘুমের ঘোরেই ভয় পেত বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে; মা মাঝেমধ্যে পাশে এসে শুয়ে থাকতো ; ঘুমের ঘোরে সে জড়িয়ে ধরতো তার মায়ের গলা—এই পৃথিবীতে তার সবচেয়ে আপন মানুষটিকে……..

 

 

এখনো সেই কড়াই গাছটার নিচে বহুপথ পাড়ি দিয়ে আসা ঢেউগুলো আছরে পড়ে; সেই কড়াই গাছের নিচে বসে আজ কেউ কি ঢরউ গোনে? সেই নিঃসঙ্গ চিলটা আজও হয়তো কেঁদে কেঁদে বেড়ায়; এখনো আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসে ; টিনের চালে এখনো বৃষ্টি পড়ে ; বৃষ্টির সেই শব্দ কি কেউ কান পেতে শোনে??

 

আমাদের প্রজন্মটাই

বোধহয় সর্বশেষ প্রজন্ম যারা আবহমান বাংলার ক্লাসিককাল শৈশব,কৈশরের স্বাদ কিছুটা হলেও পেয়েছিল; অলৌকিক, নিস্পাপ,মানবিক; একই পাড়ার ছেলেমেয়ে যেন নিজেদেরই ভাইবোন ; হই হুল্লোড় পুকুরে দাপাদাপি, চৈত্রর দুপুরে পায়ে পায়ে ঘোরা,আমচুরি,আঁচার চুরি,আখচুরি,গোল্লাছুট,রুপকথার আসর… ; এক অদ্ভুত সরলতায় জড়িয়ে ছিল আমাদের শৈশব; শৈশবকে বিদায় জানিয়ে কৈশরের দ্বারপ্রান্তে যখন পৌছালাম আমরা,তখন থেকেই যেন সুপারসনিক গতিতে অধঃপতনের দিকে যাত্রা শুরু হলো এই সভ্যতার ;

আসলে অধঃপতন

শুরু হয়েছিল আরো আগেই আমরা তখন টের পেলাম; অদ্ভুত এক আঁধারে ছেয়ে গেল এই বুড়ো পৃথিবী; ডিশ এন্টেনা  আকাশ থেকে নামিয়ে আনল অভিশাপ, ড্রয়িং রুমে বাড়ত থাকলো বোকা বক্সের বোকামি; হাইস্পিড ইন্টারনেট,স্মার্টফোন, প্রযুক্তির ভয়াল বিষাক্ত প্রলোভনে ঠেলে দেয়া হলো আমাদের কোন নির্দেশনা ছাড়াই;  অক্টোপসের মতো শক্তিশালী শুঁড় দিয়ে আষ্টপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো এই নব্য দানো; আমরা হারাতে থাকলাম শৈশব -কৈশরের মৌলিক উপাদান ; খেলার মাঠ, পুকুর,নদী,অখন্ড অবসর; আকাশ ছোয়া দালান গুলো অনুপ্রবেশ করলো আমাদের স্বাধীনতার আকাশে; ভূমি দস্যু, কারখানা, ব্রয়লার ফার্ম,মাছচাষীরা কেড়ে নিল আমাদের জলাভূমি; শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা অভিভাবকদের অসুস্থ মানসিকতা কেড়ে নিল আমাদের অবসর;

আমরা যাবো কোথায়?  উঠোনকোণের জায়গাটুকুও তো নেই!

 

যে জীবন ছিল ঘাসফুল আর মাতৃসম রুপালি জলের ঘ্রান নেয়ার,ফাগুনের অনন্ত নক্ষত্রবীথির নিচে দাঁড়িয়ে তারা গোনার,ফড়িং আর প্রজাপতির পেছনে দৌড়ে বেড়ানোর যে জীবন ছিল আলিফ লায়লা আর সিন্দাবাদের যে জীবন ছিল ফাঁদ পেতে শালিক ধরার, পুকুরে বড়শি ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার,যে জীবন ছিল রুপকথার খেলাঘরে হারিয়ে যাবার,সেই জীবনে ভর করলো অনেক জটিলতা,অস্থিরতা; অনাবিষ্কৃত আকাঙ্ক্ষাগুলো একে একে আবিষ্কৃত হলো, সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো বিকৃত উপায়ে পূরন করে দিতে এগিয়ে এলো প্রযুক্তি;

 

আমরা ভাঙতে থাকলাম ; আমরা হারিয়ে গেলাম ভুল স্রোতে;

 

এক আকাশ শ্রাবণের সঙ্গে সখ্যতা হলো আমাদের ;

  1. আমরা নষ্ট হলাম

আরো পরুনঃ অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে যেগুলো লক্ষ্য রাখবেন!

Leave A Comment