Study LightsStudy Lights

Blog Details

  • Home
  • Blog
  • Blog
  • ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি?

রোগটি ভাইরাসজনিত ; সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে ; পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয়, শুধুমাত্র তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ; ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে স্ত্রী এডিস মশা ; সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে এরা এই ভাইরাস ছড়াতে থাকে ; হালকা ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্রচণ্ড জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয় ; তবে যারা আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন  তাদের পরবর্তীতে এ রোগ দেখা দিলে প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ;

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি ?

তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে যে কারোরই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে ; এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো সবারই ভালোভাবে জানা উচিত ;

 

  • উচ্চ জ্বর (40°C/104°F)
  • তীব্র মাথার যন্ত্রণা
  • চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি
  • মাংসপেশি এবং অস্থি সন্ধি (bone) তে যন্ত্রণা
  • বমিভাব
  • মাথাঘোরা
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  • ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি

দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হলে রোগের ভয়াভয়তা বৃদ্ধি পায় ; সেই কারনে পূর্বে ডেঙ্গু তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলতে বলা হয় ;

 

ডেঙ্গু রোগের ধরন  কি ?

চিকিৎসকদের বলে থাকেন , মানুষের সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হয়- ক্ল্যাসিকাল এবং হেমোরেজিক ; ক্ল্যাসিকালে জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে নিরাময় হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে ; বিপদ ঘটে হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে ; এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা পাঁচ থেকে সাত দিন পর মারাত্মক হতে পারে ;

হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তপাত হয়, রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমা কমে যায় ; কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা দেয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ; এতে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পায় ; কিছু সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, দাঁতের মাড়ি এবং নাক থেকে রক্তপাত ঘটে ; মলের সঙ্গেও মাঝে মাঝে রক্ত বের হতে পারে ;

ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় ; এমনকি কারো কারো রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে গিয়ে শরীরের চামড়ার নিচে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয় ; পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যখন রোগীর হাত-পা দ্রুত ঠান্ডা হওয়া শুরু করে এবং রক্তচাপ কমে যায় ;
আক্রান্ত ব্যক্তি এ সময় মাত্রাতিরিক্ত ঘামা শুরু করে ; এতে তার মধ্যে এক ধরনের ছটফটানিও আরম্ভ হয় ; কেউ কেউ বমি করে বা তাদের বমি বমি ভাব হয় ; এই সময়টায় কোনো কোনো রোগীর হোয়াইট ব্লাড সেল স্বল্পতা, ইলেক্ট্রোলাইটের অসমতা, লিভারে সমস্যা, অথবা ব্রেনে রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা ঘটে ; এতে তাদের শকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ; দুঃখজনক হলো, এর ফলে অনেক রোগীর মৃত্যুও হতে পারে ;

 

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা  করবো কিভাবে ?

 

ডেঙ্গুর চিকিৎসার বিশেষ কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি ; গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন ; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘরোয়া চিকিৎসাতেই কমে যায় ; চিকিৎসকরা পেরাসিটামিল জাতীয় ওষুধ দিয়ে যন্ত্রণা এবং জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। Non-steroidal প্রদাহ-প্রতিরোধী ওষুধের রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ; রোগের মাত্রা অতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পেলে রোগী কে হসপিটালে ভর্তি এবং ডাক্তারি নজরদারি তে রাখা একান্ত জরুরী ; হসপিটালে ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় (IV) ইলেক্ট্রোলাইট (লবণ) তরল দেওয়া হয় ; এতে শরীরে প্রয়োজনীয় জল এবং লবণের যোগান বজায় থাকে ;

বাড়িতে কী করবেন?

  • পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে ;
  • প্রচুর তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করুন একটু পরপর ;
  • ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে ; স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে ; কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার  হার্ট এবং কিডনি–সংক্রান্ত জটিলতা থাকে  তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ;
  •  জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন  ক্লোফেনাক  আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না ; ডেঙ্গুর সময় এ–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে ;

 

ডেঙ্গু হলে অনুচিত খাবার ঃ

  • সহজে হজম হয়না এমন খাবার ডেঙ্গু রোগী দের খাওয়া উচিত নয়। যেমন –
  • আমিষ খাবার
  • চর্বি
  • তৈলাক্ত খাবার
  • ভাজাভুজি

উপসংহারঃ

ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ রোগ ; কিন্তু অবহেলা করলে এই রোগ মারাত্মক হতে পারে ; শহরাঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি ; তাই নগরবাসীকে আরেকটু সজাগ ও সচেতন হতে হবে ; বিশেষ করে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে ; দ্বিতীয় ডেঙ্গু সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে ; সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ভালো থাকুন ;

উৎস : – Dr. Rajarshi Sengupta

Leave A Comment