Blog Details

  • Home
  • Blog
  • Blog
  • কাজী নজরুল অনুপ্রেরনার বাতিঘর !

কাজী নজরুল অনুপ্রেরনার বাতিঘর !

যেদিন আমি হারিয়ে যাবো-
বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যা তারায় আমার খবর পুছবে-

যার শুরু আছে তার শেষ আছে জীববৈচিত্রের এই শ্বাশত সত্যকে বিশ্বাস করে প্রানীদের পথচলা;
আধ্যাত্বিকতার অন্তরালে কোন কোন মানুষ ধরনীতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে ; দূর্বার এ মহাকালীন সময়টাতে কেউ দীর্ঘজীবী হয় কেউ হয় ক্ষনজন্মা ; এই দীর্ঘ ক্ষন সময়টাতে জন্ম হয় কত পথিকের; কখনও সমাজে চলতে থাকে চরম অসঙ্গতি,দুর্দশা,শাসন,শোষন নিপীড়ন ঠিক তখনও অতি সাধারণ হয়ে জন্ম নিয়েও হয়ে উঠেন মহাপুরুষ ;আবার অসাধারন কেউ হাওয়ার পালেই হারিয়ে যায় অজানা পথে…!
সমাজের অসঙ্গতি শাসন আর শোষণে যখন পুরো সমাজটি অন্ধকারছন্ন ;বাংলা সাহিত্যে সতোন্দ্রনাথ, মোহিতলাল রবিন্দ্রনাথের যুগ চলছিল!
চলতে থাকা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রথম বলিষ্ঠ বলদীপ্ত কন্ঠস্বরে কাব্যর মহাযুদ্ধের প্রথম সৈনিক নজরুল ইসলাম; বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম….!
যার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় এক দরিদ্র পরিবারে দুখু মিয়া হয়ে আর মৃত্যু স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি হয়ে..!

১৮৯৯ সালের ২৪ শে মে থেকে শুরু করে ১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগষ্ট পর্যন্ত ৭৭ বছর জুড়ে আছে সৃষ্টি সৃজনশীলতার বিশাল এক বিস্তৃত ইতিহাস;

হতাশা-নৈরাশ্য, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বিদ্রোহ বিক্ষোভের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধিত্বকারী বিদ্রোহ, পৌরুষ ও যৌবনের অগ্রগণ্য ভাষাকারদের কবি কাজী নজরুল…!

দাসত্বের শৃঙ্খলে বদ্ধ জাতিকে শোষণ ও উৎপীড়ন থেকে মুক্ত হবার ডাক দিয়ে তিনি লিখেছিলেন,
‘বল বীর বল উন্নত মম শির,
………যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না -বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত!’

ধর্মীয় বৈষম্যর মধ্যে থেকেও ভেদাভেদ ভুলে গেয়েছিলেন মানবতার জয়গান।
গাহি সাম্যর গান –
‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,
নহে কিছু মহীয়ান।’

বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মাতা জাহিদা খাতুনের আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট একটি পরিবরে মধ্যে বেড়ে উঠেছে বিদ্রোহী রনক্লান্ত ;বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম এবং মাযারের খাদেম; দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মভিত্তিক;তাঁর ভবঘুরে বাল্যকাল আর তাঁর স্কুল শিক্ষা নিয়ে নানা অসুপ্রেরনার গল্প শোনা যায়;

অল্প বয়সে স্থানীয় মসজিদে তিনিও মুয়াজ্জিনের কাজ শুরু করেছিলেন; তাঁর ছেলেবেলা পুরোটাই কেটেছে সীমাহীন দারিদ্র্র্যে; পিতার মৃত্যুর পর তিনি তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েন;অভিভাবকহীনতায় তিনি হয়ে উঠেন উচ্ছৃঙ্খল;
কৈশোরে ভ্রাম্যমাণ নাটক দলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে সাহিত্য, কবিতা ও নাটকের সঙ্গে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন; অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি;জীবিকার তাগিদে বাল্যকালে খানসামা ও চায়ের দোকানে রুটি বানানোর কাজ করেছেন।
অর্থসংকটের কারনে তরুন বয়সেই যোগ দেন যুদ্ধে! করাচিতে গিয়েছিলেন ১৯১৭ সালে; স্বাধীনতা সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষা থেকেই তিনি যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন;১৯২০ সালে তিনি যখন কলকাতা ফিরে গেলেন, তখন কিন্তু তাঁর মূল স্বপ্নই ছিল ভারতকে স্বাধীন করা। তিনি বহু লেখায় বলেছেন সশস্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে হবে;”

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সৈনিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন;

সেনাবাহিনীর কাজ শেষ করে কলকাতায় ফেরার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন;এসময় তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন;প্রকাশ করেন ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘ভাঙার গানের’ মতো কবিতা এবং ধূমকেতুর মতো সাময়িকী;

জাতীয়তবাদী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার জন্য বহুবার কারাবন্দী হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম;জেলে বন্দী অবস্থায় লিখেছিলেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’;তাঁর এইসব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল প্রকট;

সাংবাদিকতার মাধ্যমে এবং পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যকর্মে নজরুল শোষণের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন;

কাজী নজরুল ছিলেন সব ধর্মীয় চেতনার ঊর্ধ্বে; অন্তরে তিনি না ছিলেন হিন্দু না ছিলেন মুসলিম। তাঁর একটি কথাতেই এটা ছিল পরিষ্কার- ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছো জুয়া’। তিনি সবার ঊর্ধ্বে ছিলেন মানবতার কবি; গোটা ভারতবর্ষেই তাঁর যথাযথ মূল্যায়ন কোনদিন হয়নি;তা নিয়ে আফসোস ও করেননি কখনও কবি;

তিনি তাঁর লেখনীতে একই সাথে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, বিদ্রোহ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শাশ্বত প্রেম প্রভৃতির এমন সম্মিলন ঘটিয়েছেন যা বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ;এজন্য তিনি বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল;

বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আবির্ভাব বিশেষত ঔপনিবেশিক শোষণ, অন্যায়, অত্যাচার ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে প্রবল ঝড়ের মতো;তাঁর রচিত কবিতা, গান, প্রবন্ধ, পত্রিকার নিবন্ধ প্রভৃতিতে কবির বিদ্রোহী সত্তার পরিচয় পাওয়া যায় অগ্নি-বিনার বিদ্রোহীতে লিখেছিলেন –
মহা বিদ্রোহী রনক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত!

রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামকে বর্ণনা করেছিলেন ‘ছন্দ সরস্বতীর বরপুত্র’ হিসাবে;অনেকে বলেন থাকেন তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা তাঁকে অমর করে রেখেছে।

কিন্তু  নজরুলের প্রতিভার যে দিকটা ছিল অনন্য সেটা হল তাঁর বিদ্রোহী চেতনার বহি:প্রকাশ- সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি সব কিছুর বিরুদ্ধেই বিদ্রোহে তিনি সোচ্চার হয়েছেন তাঁর সাহিত্যকর্ম ও সঙ্গীতে;
তিনি কিন্তু শুধু কবি ছিলেন না;তিনি ছিলেন গীতিকার, সুরকার, গল্পকার, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কর্মীও;

“কখনও তিনি গান গাইছেন, কখনও পত্রিকা সম্পাদনা করছেন, কখনও রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করছেন;নজরুল সম্ভবত ওই সময়ের প্রথম বাঙালি, যিনি বাংলার নবজাগরণের যে ঐতিহ্য সেটা ধারণ করেছিলেন এবং তার মধ্যে দিয়ে তিনি বাঙালিকে একটা শক্ত, সবল নতুন চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন;”

কবি নজরুল শুধু বিদ্রোহী কবি ছিলেন না প্রেম সাম্যবাদে সমান ভাবে বিচরন করেছেন যেখানে দৃশ্যমান দোলন চাঁপা, ছায়ানট, পূবের হাওয়া, সিন্ধু-হিল্লোল ও চক্রবাকের মধ্যে কবির প্রেমিক সত্ত্বারই পরিচয় ফুটে ওঠেছে। ‘চক্রবাক’ কাব্যের উৎসর্গ পত্রে বলেছেন-

‘ওগো ও চক্রবাকী
তোমারে খুঁজিয়া অন্ধ হলো যে চক্রবাকের আখি!’

সত্য হলো তিনি যেমন এক হাতে বিদ্রোহের কবিতা লিখেছেন, অন্য হাতে লিখেছেন প্রেমের কবিতা;বিদ্রোহ ও প্রেমকে তিনি একই সাথে বেঁধেছেন অসীম দক্ষতার ছলে, বলেছেন-

‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর এক হাতে রণ-তূর্য’;

শুধু প্রেম আর বিদ্রোহ কেন সাম্য ও মানবতাবাদীতে নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী;সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির উর্ধ্বে তিনি শক্ত হাতে কলম ধরেছিলেন;১৯২৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন-
কান্ডারী হুশিয়ার, পথের দিশা, হিন্দু-মুসলমান যুদ্ধ প্রভৃতি কবিতা;

কান্ডারী হুঁশিয়ার কবিতায় বলেছেন-
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোনো জন?
কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার!’

অন্যদিকে নজরুল ইসলামকে বলা হয় সাম্যের কবি, মানবতার কবি। তিনি হিন্দু-মুসলিম, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষকে সমান চোখে দেখেছেন। ‘মানুষ’ কবিতায় তিনি বলেছেন
গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!
তিনি যেমন মানবতার গান গেয়েছেন তেমনি সমাজে নারী-পুরুষের সমান অবস্থানে কথাও বলেছেন। নজরুল ইসলাম জানতেন মানব সমাজের উন্নতিকল্পে তাঁরা একে অপরের সাথে জড়িত। তিনি ‘নারী’ কবিতায় বলেছেন-
‘তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।

বিজ্ঞানী নিউটন কি নাস্তিক ছিলেন?

By: Md Jobaer Hossain

Leave A Comment