Study LightsStudy Lights

Blog Details

  • Home
  • Blog
  • Blog
  • ইন্টার্নশিপের উপকারিতা কি ?

ইন্টার্নশিপের উপকারিতা কি ?

ইন্টার্নশিপের উপকারিতা কি ?

চাকরি জগতে সবচেয়ে বেশিবার শোনা বাক্য ‘অভিজ্ঞতা  আছে’; কারণ চাকরির সময় সবাই চাকরিপ্রার্থীদের কাছে জানতে চান তাদের পূর্বে কোনো কাজের অভিজ্ঞতা আছে নাকি; আমাদের মাথায় তখন প্রশ্ন আসে অভিজ্ঞতার জন্যই তো চাকরি করতে চাচ্ছি! তাহলে আবার এই প্রশ্ন কেন? চাকরি না করলে অভিজ্ঞতা আসবেই বা কীভাবে?

ইন্টার্নশিপ কথাটা আমরা সবাই কমবেশি শুনে থাকলেও এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই নেই; নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বা  বিনা পারিশ্রমিক কাজ শেখা দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাজ করাকেই ইন্টার্নশিপ বলে; আর যারা ইন্টার্নশিপ করে তাদেরকে বলা হয় ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ;

ইন্টার্নশিপ মূলত দুই ধরণের হয়ে থাকে; আর তা হলো পেইড ইন্টার্নশিপ এবং আনপেইড ইন্টার্নশিপ; এই দুইটির বাইরেও আরেকধরণের ইন্টার্নশিপ আছে যেখানে নিজেরই অর্থ দিয়ে কারিগরি বিদ্যা অর্জন করতে হয়; এর বদলে আপনাকে দেওয়া হবে একটি সার্টিফিকেট যা পরে আপনি সেই সেক্টরে কাজে লাগাতে পারবেন;প্রতিটি ইন্টার্নশিপের মেয়াদ সাধারণত ১ মাস থেকে ১ বছর হয়ে থাকে। আবার ইন্টার্নশিপ পার্টটাইম ও ফুলটাইম; উভয়ই হতে পারে;

 

সাধারণত যে যেই বিষয়ে পড়াশুনা করে বা দক্ষ, তারা সেই বিষয় রিলেটেড কাজের উপর ইন্টার্নশিপ করে; যেমন: মার্কেটিং, ফিন্যান্স, কম্পিউটার সায়েন্স ইত্যাদি। ইন্টার্নশিপ করার উপযুক্ত সময় হলো শিক্ষাজীবন। কারণ, এই সময় পড়ার পাশাপাশি বাকি সময়টুকু ইন্টার্নির দিকে দেওয়া যায়। আর ইন্টার্নশিপ যেহেতু নিজের পড়ার বিষয়ের উপরেই হয়, সেহেতু দু’টোর সামঞ্জস্য রেখে করা যায়;

 

ইন্টার্নশিপ কীভাবে যোগাড় করবেন:

কোনো জিনিসই আপনি রেডিমেড পেয়ে যাবেন না; কোনোকিছু পেতে হলে তো  একটু কষ্ট করতেই হবে; নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা এবং বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে চোখ রাখেন;সেখানে প্রায়ই চাকরির ও ইন্টার্নশিপের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়;পাশাপাশি স্ট্যাডি লাইটসের জব পোর্টালে চোখ রাখুন;

তবে কাজ খোঁজার আগে নিজের  ক্যারিয়ার গোল ঠিক করে নিবেন; কোন কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে, সেটা নিজেই বের করেন; কারণ, যেই বিষয়ে আপনার আগ্রহ নেই, সেই বিষয়ে ইন্টার্নশিপ করাটা হবে সময়ের অপচয়; আজকাল আমরা সবাই ফেসবুক ও লিংকড ইন ব্যবহার করে থাকি;এই দুইটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার মানুষজনের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে;তাদের মাধ্যমেও আমরা ইন্টার্নশিপের খবর পেতে পারি;

 

ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিভি তৈরি; আমরা অনেকেই সিভি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাই না; কিন্তু চাকরির আবেদনের সময়, ফর্মের সাথে আপনি যাবেন না, যাবে আপনার সিভি। তাই সবচেয়ে ভাল হয় কলেজজীবনেই আপনি আপনার সিভি নিয়ে কাজ শুরু করে দিন; শিক্ষাজীবনের নানারকম অর্জন  আপনার সিভিতে যোগ করেন, যা আপনাকে অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকতে সাহায্য করবে; তবে সিভিতে মিথ্যা কিংবা অতিরঞ্জিত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। সিভি তৈরির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের সিভি লিখার ফরম্যাটটা ফলো করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় সিভি তৈরি করার পর তা কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে দিয়ে চেক করিয়ে নিন;

 

আর কভার লেটার লেখার সময় আপনি কেন সেখানে কাজ করতে চান,  কী জন্য নিজেকে ওই পদের যোগ্য মনে করেন- এই কথাগুলোও লিখে দেবেন;তাই আপনি যেই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার জন্য আবেদন করছেন,  সেই প্রতিষ্ঠানটির খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নিন;

 

ইন্টার্ন হয়ে যাওয়ার পর:

ইন্টার্নশিপ কনফর্ম হয়ে যাওয়া মানেই কাজ শেষ হয়ে যাওয়া নয়, এর মানে হলো কাজ শুরু হয়ে যাওয়া,  প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া। তাই প্রত্যেকটি বিষয়ই ইতিবাচকতার সাথে গ্রহণ করেন। কারণ, আপনি এখানে শিখতেই এসেছেন।

 

ইতিবাচক মনোভাব:

শুরু শুরুতে আপনার মনে হতে পারে যে, আপনার মেন্টররা হয়তো আপনাকে খুব বেশি কাজ দেয়, অনেক চাপে রাখে। কিন্তু এই কাজের মাধ্যমে তারা দেখেন আপনি চাপে পড়ে কোনো কাজ কীভাবে করতে পারেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেন নাকি, আপনার কাজ কতটুকু ভালো হয়। তাই প্রত্যেকটি কাজ এমন নিখুঁত ভাবে করেন যেন এটা আপনার জীবনের শেষ কাজ!

 

যোগাযোগ করার আদবকেতা:

এখন তো আর চিঠি লেখার যুগ নেই, তাই সহকর্মীদের যোগাযোগ করার জন্য ই-মেইলই আমাদের ভরসা। তাই বেশ ভালোভাবে ই-মেইল লিখার কায়দা-কানুনটা রপ্ত করতে হবে। এবং মেসেঞ্জারে কথা বলার সময়েও কিন্তু বড়-ছোট’র বিষয়টা  মাথায় রাখতে হবে। আপনি নিশ্চয়ই আপনার বন্ধুদের সাথে যেভাবে কথা বলেন, সেভাবে আপনার সিনিয়র কিংবা মেন্টরদের সাথে কথা বলবেন না?

 

নিজের সেরাটা দিন:

যতটা সম্ভব নিজের সেরাটা দিন। আর এরজন্য আপনাকে নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ডেডলাইনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে আপনি কোন কারণে ডেডলাইন মিস করেছেন এটা মেন্টরদের জানিয়ে দিতে হবে। সমস্যা সবার থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে আলসেমি করে কাজ ফেলে রাখা যাবে না। কেননা শেষ মূহুর্তের কাজ কখনোই ভাল হয় না। তাই সময়ের কাজটা সময়েই শেষ করতে হবে।

 

যত পারেন প্রশ্ন করেন:

প্রশ্ন করতে কখনো দ্বিধাবোধ করবেন না৷ আপনি কোনো প্রফেশনাল কর্মী না, আপনি এখানে শিখতেই এসেছেন। তাই কোনোকিছু না বুঝলে অবশ্যই সিনিয়রদের প্রশ্ন করবেন। তারা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যই আছেন। আপনি যত বেশি প্রশ্ন করবেন, তত বেশি বেশি শিখতে পারবেন৷ আর প্রশ্ন করার মাধ্যমে তারাও বুঝতে পারবেন যে, আপনি আপনার কাজ নিয়ে কত বেশি সিরিয়াস৷ আর এটা কিন্তু আপনার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট!

 

নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার এই তো সুযোগ:

আপনি যেই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে আছেন,  সেখানকার সকল কর্মচারীর সাথে পরিচিত হন,  কুশল বিনিময় করো। এতে করে আপনার নেটওয়ার্ক অনেক বড় হয়ে উঠবে। পরবর্তীতে ওই  কোম্পানির কোনো কাজে  কিন্তু সবার আগে আপনার নামটাই তাদের মাথায় আসবে। আর এটা কিন্তু চাকরি পার্মানেন্ট করার একটা বড় সুযোগ!

 

একটা বিষয়েই ফোকাস করেন:

সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা করবেন না। যেই কাজটা আপনি সবচেয়ে ভাল পারেন, সেটার দিকেই পূর্ণ মনোযোগ দিন৷ একসাথে অনেক কাজ করতে গেলে পরে সময় মেলাতে হিমশিম খাবেন এবং পরে দেখা যাবে যে কোনোটাই শেষ করতে পারেননি।

 

নিজেকে স্পঞ্জের মতন ভাবতে শিখেন:

আপনারা সবাই নিশ্চয়ই স্পঞ্জ দেখেছেন। স্পঞ্জ কী করে? সব কিছু শুষে নেয়, তাই তো?  আপনিও একটা স্পঞ্জের মতন হয়ে উঠেন, যেই স্পঞ্জ সামনে যা যা শেখার পায়; তার সব শুষে নেয়। ইন্টার্নশিপের মূল উদ্দেশ্যই হলো শেখা। যে যত বেশি শিখতে পারবেন, সে তত বেশি লাভবান হবেন৷ খুঁটিনাটি যা যা বিষয় আছে সব শিখে ফেলেন। এটাই কিন্তু আপনার করপোরেট গ্রুমিং। তাই বেশি বেশি শুনবেন এবং সব জ্ঞান ও তথ্য নিজের মধ্যে ধারণ করে নেবেন। এই জ্ঞানগুলোই কিন্তু পরবর্তীতে আপনার জীবনে খুব কাজে আসবে।

 

নিজেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানান:

মাঝে মাঝে কাজের এতবেশি চাপ পড়ে যায়, যে মনে হয় সবকিছু বাদ দিয়ে দিই, হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু আপনি হাল ছাড়বেন না! কেননা আপনি চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হন না। চ্যালেঞ্জ নেওয়াই আপনার নেশা। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যান৷ নিজেকে সবসময় বোঝাতে থাকেন যে এই কাঙ্ক্ষিত ইন্টার্নশিপটার জন্য আপনি অনেকদিন অপেক্ষায় ছিলেন। আপনার যেন পরে মনে না হয়, সুযোগ আপনার হাতে ছিল, সময় আপনার পক্ষে ছিল, কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার ফলে সুযোগটাও আপনার হাত গলে বেরিয়ে যায়৷ তখন আফসোস করা ছাড়া আর কিচ্ছু করা যাবে না।

 

Yes-I-Can Attitude:

কেউ কোনো কাজ দিলে সবসময় সেটা করার চেষ্টা করবেন৷ মাঝে মাঝে নিজ উদ্যোগেই কাজ নেবেন, বারবার যেন আপনাকে এটা করো, সেটা করো বলা না লাগে। নিজের ইচ্ছেতেই নতুন নতুন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকে প্রমাণ করবেন।

 

ইন্টার্নশিপের উপকারিতা এবং অপকারিতা:

সত্যি বলতে, ইন্টার্নশিপের কোনো অপকারিতা নেই। কিন্তু এর অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে।

ইন্টার্নশিপ একজন ব্যক্তিকে চাকরিতে ঢোকার আগেই চাকরির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সহায়তা করে। কোনো চাকরির ইন্টারভিউতে আপনাকে যদি সেই চাকরি সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন করে, তাহলে শুধু থিওরিটিক্যাল উত্তর পেয়ে নিয়োগকর্তা সন্তুষ্ট হবেন না। কিন্তু আপনি যদি সেই বিষয়ের উপর আগে থেকেই ইন্টার্নশিপ করে থাকেন, তাহলে তুমি প্র‍্যাক্টিকালভাবেও উত্তর দিতে পারবেন। কারণ, আপনার সেই কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে আপনার করপোরেট জগৎ সম্পর্কে একটা ধারণা হবে৷ কীভাবে একটা প্রতিষ্ঠান চালানো হয়, কী কী হয় সব সম্বন্ধেই মোটামুটি একটা ধারণা আপনি পেয়ে যাবেন।  আনপেইড ইন্টার্নশিপগুলোতে আপনি হয়তো আয় উপার্জন করতে পারবেন না, কিন্তু যেই অভিজ্ঞতাটা অর্জন করবেন, তা কিন্তু অর্থের থেকে কম নয়! কেননা অভিজ্ঞতা পারিশ্রমিকের থেকেও মূল্যবান।

ইন্টার্নশিপের মাধ্যমেই আপনি জানতে পারেন কোন কাজে আপনার ভাল দক্ষতা আছে; এবং আপনার দোষ-ত্রুটি কোন জায়গায়;তাই পার্মানেন্ট চাকরিতে ঢোকার আগে নিজের দোষগুলো চিহ্নিত করে শুধরাতে কিন্তু ইন্টার্নশিপই আপনাকে সাহায্য করে; এর মাধ্যমে কিন্তু আপনার টাইম ম্যানেজমেন্টটাও একটা শৃঙ্খলায় চলে আসে;সময়ের কাজ সময়ে করা, কোনো কাজ ফেলে না রাখা- এগুলো ইন্টার্নির মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব;

সেই সাথে এটি আপনার ক্যারিয়ারের ভিত গড়ে তোলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল নলেজ বাড়ায়; আপনার সিভি ভারী করে এবং অভিজ্ঞতার ভান্ডার পূর্ণ করে;

তাই কলেজজীবনের শুরুতেই বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ শুরু করে দিন; কারণ, অভিজ্ঞতা অর্জনের এই তো সুযোগ!

1 Comment

  • Mark

    September 13, 2022 - 7:31 am

    Thanks for your blog, nice to read. Do not stop.

Leave A Comment