Blog Details

রাত যখন ২টা

রাত ২টা গা টা ছম ছম করছে হটাৎ ঘুম ভেঙে গেল কিন্তু গতিবিধী স্বাভাবিক মনে হল না ।গা টা গরমে উতপ্ত হয়ে আছে।দুটি পা একসাথে মিলতেই আঁতকে উঠলাম ,মাথা টা প্রচন্ড ব্যথায় ব্যথিত …হঠাৎই এসবের কোন মানে বুঝলাম না ।।কিছু না বুঝবার আগেই নিজেকে পিপাসিত মনে হলো পানি পান করার প্রবল ইচ্ছে জাগলো । মাথার পাশেই থাকা টেবিলের উপরে রাখা বোতল ভর্তি পানি টেবিল থেকে পানির বোতল টা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ানোর চেস্টা করলাম কিন্তু ভাবেই হাত তো উপরেই তুলতে পারছি না ,হাজার চেস্টার প্রচেস্টায় ব্যর্থ।।

তখন ভাবলাম ম্যাচমেট দের ডাক দিই , দিলামও ডাক দিচ্ছি কিন্তু ওরা কেউ সাড়া দিচ্ছে না । 

অনুভব করলাম আমি ডাকছি ঠিকই কিন্তু কোন আওয়াজ হচ্ছে না । হুস জ্ঞান সবই আছে চিন্তা শক্তিও কাজ করছে কিন্তু হাত দিয়ে কেন সামান্য একটা পানির বোতল আনতে পারছি না আর কেনইবা তাদের আওয়াজ করে ডাকতে পারছি না সেটা বোঝার বোধগম্য হচ্ছে না ; বার বার একটা কথাই ভাবছি আওয়াজ কেন বের হচ্ছে না আমাকে কেউ হ্যালুসিনেশন করে নি তো? আগে তো কখনোই এমন পরিস্থিতি হয়নি…। মাথার যন্ত্রনাটা তীব্র হারে বাড়ছে।।

 

অনুভব করলাম আমি ডাকছি ঠিকই কিন্তু কোন আওয়াজ হচ্ছে না।

একবার মনে হচ্ছে হয়ত স্বপ্নে দেখছি কিন্তু স্বপ্ন দেখলে REM সুত্র অনুযায়ী চোখের পাতা কাঁপবার কথা কিন্তু চোখ কাঁপছে না জ্বলছে তারপরও নিজেই নিজেকে চিমটি কাটলাম । নাহ স্বপ্ন নয় ! আরও শিওর হওয়ার জন্য মাথার চুলও টানলাম !সবই ঠিক আছে কিন্তু যেই চুলে সামান্য কেউ হাত দিলে তার সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ করতাম আজ সেই চুল হাজার বার হাজার শক্তি প্রয়োগ করেও একটু বিরক্তি অনূভিত করতে পারনি…।

 

বিষয়টা বেশ চমকপ্রদ লাগছিল।। আমার সাথেও এসব হয়? শেষ ভরসা হিসাবে মোবাইল খুজছিলাম বেশ বেগ পেতে হলো কিন্তু সিকিউরিটির জন্য পাসওয়ার্ড লক দিয়ে রেখেছিলাম পাসওয়ার্ডের সংখ্যা গুলো ব্রেন দ্রুত পাস করছে আর তা হলো ১২২১২১ কিন্তু বিপত্তি টা হলো পাসওয়ার্ড মনে থাকলে কি হবে লক খুলতে পারছিলাম না বোধহয় তখন অপরিচিত হয়ে গিয়েছিল পাল্টে গিয়েছিল লকটাই ……।নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে মনে হতে লাগল……।

 

তখনই মনে হতে লাগলো যদি ওয়াসরুম থেকে একটু ঘুরে আসতে পারি তাহলে বোধহয় সব ঠিক হয়ে যেতে পারে।। কিন্তু আমার সাথে এখন পর্যন্ত যা ঘটছে তাতে ওয়াসরুমে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে হলো না ।; তবে চেস্টা করতে নিষেধ কি ? সমস্ত শক্তি একত্রে বসবার চেষ্টা করলাম হ্যাঁ আমি তো ঠিক আছি এতক্ষন কি স্বপ্নের মধ্য স্বপ্নে দেখছিলাম তাহলে .।।এক সময় ছিলো মাঝে মধ্য মাথা যন্ত্রনা হতো কম্বল গায়ে চাপিয়ে মরা মানুষের মত ৩-৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যেত ; একটা পর্যায়ে মনে হলো ঘটনা হয়তো সেটাই হচ্ছিল শুধু ব্যাথার প্রভাবটা একটু বেশি ছিল ।এরপরের ঘটনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না লক্ষ্য ছিল ওয়াসরুম তাই বিনা বাধায় দাঁড়িয়েও গেলাম দাঁড়ানোর সাথে সাথে আমাকে কে যেন সাজোড়ে ধাক্কা দিল পশ্চিম দিকে যেতে চাইছি কিন্তু আমাকে পূর্ব দিকে নিয়ে যাচ্ছি ধাক্কাটা খেলাম লোহার দরজায় শব্দ হলো কিনা সঠিক জানি না কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো একটু ও ব্যাথা পেলাম না…।

 

বহু কষ্টে কারও নির্যাতন উপেক্ষা করেও ওয়াসরুমে গেলাম বাতিটা আমি জ্বালিয়েছিলাম নাকি অন্য কেউ জানিনা দেখলাম বালতিটাও পানি পূর্ণ চকচক করছে চেহারা স্পষ্ট বুঝতে পারার কথা কিন্তু দেখতে পারছি কিনা জানিনা কিছু বুঝেই না বুঝে মাথাটা ডুবিয়ে দিলাম পানিতে । পানি পূর্ণ বালতিতে নিজের চেহারা দেখতে বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করে কিন্তু আমার ভেতরে পছন্দ অপছন্দের হরমোন কাজ করছে না ,১ মিঃ মাথাটা ডুবিয়ে রাখতেই তীব্র শিতে আমাকে শীতল করে দিল আমি আর থাকতে পারলাম না বের হবার চেষ্টা সফল কিসের যেন গন্ধ ভেসে আসছিল ঠিক গন্ধ না সুগন্ধ কিন্তু ধরতে পারছিলাম না মানুষের মস্তিস্ক ১০০০০ ঘ্রান স্মরনে রাখতে পারে আমার বোধহয় পূর্ণ হয়ে গিয়েছে ! মাথাটা তখন ও যন্ত্রনায় একাকার পানি খুব ভালো লাগছিলো আদি প্রানি অ্যামিবা পানি থেকেই সৃষ্টি তার পরও সমুদ্রের পানিতে যে পরিমান সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং পটাশিয়াম ক্লোরাইড থাকে মানুষের রক্তেও ঠিক একই পরিমানে আছে হয়তো সে কারনেই পানিকে ভালো লাগছে । কিন্তু আমি তো আমার তোশকবীহিন খাটে বসে আছি তোশকটা কোথায় ঠিক মনে করতে পারছি না । টলস্টয় কে মনে পড়ছে কিন্তু সে আসলে কে? এর মাঝেও ভেজা মাথাটা যে মুছতে হবে সে নুন্যতম জ্ঞানটুকু আমার তখন নেই…।

 

কিন্তু এই ভাবনা গুলো কিসের ? না মুছেই শুয়ে পরলাম । মনে হচ্ছিল জীবনানন্দ দাশ কানের কাছে গুন গুন করে পড়ছে “এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ! রক্ত ফেনা মাখা মড়কের ইঁদুরের মত ঘাড় গুজি । আধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার কোনদিন জাগিবে না আর”। সব কিছুতেই কেন জানি তাল পাকিয়ে ফেলছি । শরীর তখনও এত উত্তপ্ত যে গায়ে চীনাদের রাইস টী বোধহয় রান্না হয়ে যাবে ..।তারপরেও প্রচন্ড শীত গ্রাস করে ধরেছে…।ধীরে ধীরে পুরো শরীর অবাশ হতে থাকলো……কি করবো একটি বার ও ঠাওর করে উঠতে পারছি নি কারন এরকমটি আমার সাথে আগে কখনো হয় নি…। অদ্ভুদ অদ্ভুদ ভাবনা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে ।

 

মায়ের কথা এতটা বেশি মনে পরছিল যে সেটা ভাবা কেবলই আমার কাছে মিথ।ভাবছিলাম একটা ফোন দিয়ে মায়ের মুখ থেকে একটি কথা শুনবো মনি কি করতেছ…।কিন্তু শত প্রচেস্টায় ফোনের পরিচিত লকটাই খুলতে পারলাম না…।পৃথিবীর কাছে বোধহয় আমার প্রয়োজন টা শেষ আমি হয়ত জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছি , জীবনান্দ দাশ বোধহয় সেটাই আমকে শোনালেন ,মনে পড়ছিল আমার সাথে ঘটা সহজ কঠিন দুঃখ আর কষ্ট গুলো যেই আমি সামান্য দুঃখে কাঁদতাম অথচ জীবনের সব দুঃখের কথা মনে পড়া সত্ত্বেও একটি বার ও চোখের কনা থেকে একটু পানি ও বের হল না… কাঁদলে নাকি মানসিক চাপ কমে যায় কিন্তু কান্না ও তো আসছিল না চাপ কাটাবো কী করে ! খুব ই আশ্চর্য লাগছিল অন্তর ফেটে যাচ্ছিল আমি এ কোন বাস্তবতায় ……।

 

বার বার আয়াতুল কুরসী পড়ছি এত সব ব্যর্থতার মাঝে বালিশের নিচে থাকা ম্যাচ থেকে একটি কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালানোর প্রচেস্টায় সফল হয়ে আগুনের ছোয়া পেতে চাইছিলাম কিন্তু আগুন কিভাবে জ্বলাতে হয় কি করতে হয় সেটা পর্যন্ত মনে নেই,কিন্তু কিভাবে যেন আগুন জ্বলে গেল হাতটা চেপে ধরলাম আগুনে নিজেকে উজ্জ্বল লৌহ মানব মনে হচ্ছিল…আগুনেও আজ আমার কিছু হচ্ছে না ………।ভাবছিলাম মারাই তো যাবো তাহলে কি আমি জাহান্নামে যাবো ???? কি থাকে জাহান্নামে?? শুনেছি জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার থেকে ৭০ গুন শক্তিশালি তাতেই কি আমার কিছু হচ্ছে না…।।কি করলাম ১৫ টি বছর ধরে এত পড়ালেখা এত সার্টিফিকেট এত অর্জন কী হবে তার আমি তো আর থাকবো না …।।১৯ টি বছরে গড়া এত আত্নিয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কী হবে…। আমি যাদের আলোচনার একছত্রে ছিলাম তারা তো আমায় আর একটি বারের জন্য স্মরণ করবে না ……।হাসির অতিত মুহূর্ত গুলো ভাসছিল কিন্তু হাসি নেই…..হঠাত ই চোখের দু পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে…………………।

 

শরীর টা ভারী হতে থাকল ক্রমশ…………….আসলে আমার পুরো অস্তিত্ব টা আর আমি বোধহয় মিথ ……ভাবছিলাম কতজনের সাথে কত রকমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম কিন্তু আজকের পরেতো আমাকে কেউ আর মনে রাখবে না …তবে কী করলাম এতদিন আমার অবস্থা কেমন জানিনা শুধু জানি সারা পৃথিবী একদিকে আর আমি একদিকে……কেউ যে কাছে এসে আমাকে একটু বলবে বাবা কি হয়েছে কেউ বা ফোন দিয়ে বলবে কী হয়েছে কিন্তু আমার কেউ তখন ছিল না…।।যন্ত্রনার তীর গুলো বিষন্ন করে তুলছিল ভাবনা গুলো একে একে সবাই কে মনে পড়তে লাগল সবার হাসিমাখা মুখখানা আমার চোখে জ্বল জ্বল করছে মা আমার সামনে এসে মাথা বুলিয়ে আমাকে বলছে কী হয়েছে তোর পাগল কিছুই হবে না ,এসব কিছু না ঠিক হয়ে যাবে, পাশে দাঁড়িয়ে আব্বু বলছিল কিসের চিন্তা করছো আমরা তো পাশেই আছি , আর আমার চোখের পানি তখন বলছিল মা তুমি জানো না কি হচ্ছে আমার সাথে আমি তো কেবলই রুপকথার গল্প…।।

 

যন্ত্রনার মাত্রা বাড়তেই থাকলো টেবিল থেকে পানির বোতল থেকে পানি মুখের দিকে ঢাললাম বিছানা যে ভিজে যাবে সে হুশ আমার ছিল না গামছাটা দিয়ে নিজের অপরাধী মুখটা ঢাকার চেস্টা করছিলাম কত জনকেই না বকা বানিয়েছি দুঃখ দিয়েছি তার কি আমাকে মাফ করবে ! মাকে সত্যি সত্তি খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল ; জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যাবো সেখানে কি প্রিয়জনেদের প্রিয় নাম ধরে ডাকা শুনতে পারবো?…..কি পাপ করেছিলাম নিজের মৃত্যু এত বিষাদময় কেন হতে যাচ্ছে……বিছানায় উঠে বসার চেস্টায় সফল হলাম চারদিকে ঘুরে ফিরে দেখছিলাম হঠাত ই কে যেন বলল আমাকে অযথা খুজছো আমি তো তোমার পাশেই …।।

 

মা বলে একটি বার ডাক দেওয়ার শক্তি আর চেতনা টুকু ছিল না শুধু ছিল চোখের জ্বল ; খুজেও কাউকে পেলাম না মনে হচ্ছিল আমার সাথে কেউ লুকচুরি খেলছে……।উত্তেজনা জমেছিল কি যেন মনে করে দেওয়ালে আঘাত করলাম সাজোরে কিন্তু আমার আঘাতের হাত টা ধরে ফেলল ফিরিয়ে দিল আঘাত কে।চোখ বুজে আসছে আর মৃদু স্বরে কাউকে ডাকছিলাম আর বলছিলাম কেউ আমায় একটু ও সাহায্য করবে না আমি তো মরে যাচ্ছি চলে যাব তোমাদের ছেড়ে জানতে চাইবে না আমি কেমন আছি……??।।

 

তোমাদের কতই না সাহায্য করেছি আজ আমার দুঃসময়ে তোমরা আমকে এই সাহায্য ও করবে না ? আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী কে কোথায় কেউ না তো ! অহনা আমার পাশে নেই সে বহুদিন হলে কিন্তু একজন আছে সে আমাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে কিন্তু কখনো বলতে পারেনি মেয়েরা আসলে এমন ই হয় তার কথা মনে পড়ে কষ্ট লাগার কথা না! একটা কলম আর কাগজ খুজছিলাম কাগজ কাগজ কলম ঘুমোবার সময় বালিশের নিচে রাখি তাই খুজে পেলাম কলম দিয়ে কাগজে লিখতে শুরু করলাম মাথার উপরে ঝুলতে থাকা বোর্ডে একটি অক্ষরও পারলাম না কলম দিয়ে তো আর বোর্ডে লিখতে যাবার কথা না সে জ্ঞান কি আমার আছে ! রাগে ক্ষোভে কলমটা ছুড়ে মারলাম ! সময় টা কত জানি না চোখটা আপ্রান চেস্টায় খুলে দেখি আমার হাতে তখনও কলম আর এক টুকরো কাগজ চোখ বন্ধ করে কি যেন লিখলাম মনে হচ্ছিল কেউ আমার হাত দিয়ে ছোট্র বেলার মত লিখে দিচ্ছে আর বলছে এটা হলো সরে অ …।।

 

লেখার পর্ব ইতি হতে না হতেই মায়ের মমতা মুখখানি আবার সামনে আবছা আবছা ভেসে উঠছে কাঁদতে মন চাইছিল পৃথিবীর সমস্ত শক্তি এক জায়গা করে সে কান্না; হঠাৎই কারো স্পর্শ অনুভাব করলাম ।। কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলে খুজলাম কিন্তু কাউকে দেখলাম না …। এখন ও মনে হচ্ছে স্বপ্ন আরো একবার কিন্তু শরীর টা ভেজাতে চাইলাম কিন্তু এবার বোতল টাও খুজে পাচ্ছি না ; তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো ছুড়ে মারা কলমটি মাথার পাশে আর একটা চিরকুট লিখা দুঃখিত যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা করবেন বাকি কিছুই আমার অজানা…। আমি কি কোন নেশা করেছি নাকি ধুর জীবনে স্পর্শ ও করি নি আর আমি তো চার দিন একটি বারের জন্য বাইরেই যায়নি …। হঠাৎ আমার শরীরে একটি হাত গা বুলিয়ে দিচ্ছিল ।। তারপর জানিনা জ্যোৎস্না দেখতে ইচ্ছে করছে । কিছুক্ষন বাদেই ম্যাচ ম্যানেজার চীৎকার করে ডাকছে সবই ঠিক আছে ।কিন্তু শেষ রাতের হাত টা কার ছিল।।। আর সেই চিরকুট???

Leave A Comment